পথের ধুলোয় শিক্ষা


 সন্ধা ৫:১৬, 

মাগরিবের সময়। আযান হচ্ছে। লম্বা লম্বা পায়ে এগিয়ে যাচ্ছি মসজিদের দিকে‌। পুরো আকাশ জুড়ে সন্ধা নেমে আসছে। এইতো নাক বরাবর সোজা মসজিদটি দেখা যাচ্ছে। মসজিদের এই গলিটির পাশেই ছোট্ট একটি এটিএম বুথ। 

সদরুদ্দিন, বসে আছেন বুথের সামনে। একজন সিকিউরিটি গার্ড। ফ্লোরে ছড়িয়ে আছে বই, কাগজ আর পেন্সিল। তার সামনেই বসে আছে একটি শিশু- গোলাম রাসুল আয়ান। 

কী চমৎকার একটি দৃশ্য। উন্নত পরিবেশে এসির চাদরে মুড়িয়ে পড়ানো কষ্ট হয়ে যায় বাচ্চাদের। আর সেখানে রাস্তার ধারে, বুথের সামনে কাজের ফাঁকে ফাঁকে চলছে বাবা ছেলের বিদ্যাভ্যাস। 
সদরুদ্দিন সকল প্রতিকুলতা উপেক্ষা করে নিজরে দায়িত্বের ফাঁকে সন্তানকে পড়াচ্ছেন। রাস্তার পাশে ধুলিমলিন এই জায়গাটাই সদরুদ্দিন আর আয়ানের পাঠশালা। এক হাতে পেন্সিল ধরে বাবার কথা শুনছে আয়ান। সদরুদ্দিনের চোখে মুখে লেগে আছে অদৃশ্য এক গভীর তৃপ্তি। সন্তানের ভবিষ্যৎ ভিত গড়ছেন রাস্তার পাশে বুথের সামনে দায়িত্বের ফাঁকে ফাঁকে। 

ছোট্ট আয়ান। বয়স আর কত। দশ-এগারো। সবে মাত্র ক্লাস ফোরে পড়ে। 
সে হয়তো উপলব্ধি করতে পারে না বাবার সংগ্রামের বিষয়গুলো। হয়তো জানেও না ঝুটপট্টির ছোট্ট ঘরটিতে ফিরে কতটা ক্লান্ত হোন বাবা। গোনা কয়েক বেতনে সংসার চলে তাদের। 

পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। চোখ সরাতে পারছিলাম না কোনভাবেই। কয়েক কদম সামনে গিয়ে থমকে দাড়ালাম। কিছু কি জিজ্ঞেস করবো না করবো না। কদম দুটি দিয়ে সামনে দাড়ালাম। 
আস্সালামু আলআইকুম। 
আঙ্কেল, কে? আপনার ছেলে?
জি?
কোথায় পড়ে? স্কুলে? 
হুম
কোন স্কুলে?
অমুক একটা স্কুলে । (স্কুলের নামটা এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না।)
কোন ক্লাসে পড়ে সে?
ক্লাস ফোরে। 
মাশাআল্লাহ। 
ছেলের নামটা  কি আঙ্কেল?
গোলাম রসুল আয়ান। 
মাশাআল্লাহ  কী সুন্দর চমৎকার একটি নাম। 
আপনার কি নাম চাচা?
সদরুদ্দিন। 
একটা ছবি তুলতে পারি? 
জি
কথা এইটুকুই। 
একটা বারের জন্যও আমার দিকে তাকালো না ছেলেটি। মনোযোগের সম্পূর্ণটা দিয়ে লিখছে তো লিখছেই। আদর করে মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলাম। তখনো আমার দিকে তাকানোর প্রয়োজন অনুভব করেনি ছোট্ট সোনামণিটি। 

গণিত পড়াচ্ছেন বাবা। রাস্তার পাশে বসে গণিতের সাথে যুদ্ধ এ দৃশ্য যেন জীবন্ত একটি গল্প। এ যুদ্ধ শুধু সংখ্যার নয়, জীবন বদলে দেওয়ার। রাস্তায় বসে সন্তানের ভবিষ্যতের ভিত গড়ে দেওয়ার। 

হয়তো আজ মাগরিবের আলো শেষ হওয়ার সাথে সাথে সদরুদ্দিন আর আয়ান ফিরবে তার ঝুটপট্টি ঘরে। কিন্তু রাস্তায় বসে শিখে নেওয়া ও বাবার ভালোবাসার এই ছোট্ট পাঠশালাটি রয়ে যাবে অনন্তকাল। 

স্যালুট প্রিয় বাবা, 
স্যালুট বাপের আদর্শ বেটা। 
(ঘটনার টাইম
5:16 pm
18.11.24)

(লেখার টাইম
12:54 am
19.11.24)
-------------------------------------------------------------------
কাটা ছেঁড়া অংশ:

মাগরিবের আযান হচ্ছে। সন্ধায় ছেয়ে যাচ্ছে পুরো আকাশ। শহরের উঁচু উঁচু দালান কোঠার ভিরে আকাশটাকে কেমন ছোট ছোট লাগে। শহরের আকাশ বলে কথা। আর ঘর বাড়িগুলো আকাশটাকেই কেমন ছে ছোট বানিয়ে দিয়েছে। উঁচু দালান কোঠা আর ঘর বাড়ির ঠেলায় বিশাল আকাশটাও ছোট ছোট লাগে। লম্বা লম্বা পায়ে এগিয়ে যাচ্ছি মসজিদের দিকে। মসজিদের গলির পাশেই ছোট্ট একটি এটিএম বুথ। সামনেই ফ্লোরে বসে আছেন সদরুদ্দিন, একজন সিকিউরিটি গার্ড। পরনে নীল রংয়ের একটি পোশাক। আর মাথায় কালো একটি ক্যাপ। বাম দিকে একটু হেলে আছে ক্যাপটা। আইডি কার্ডটাও গলাও ঝুলছে। বেশ সৌখিনেই মনে হচ্ছে লোকটাকে। জুতাগুলও মাশাআল্লাহ। তার সামনেই ফ্লোরে ছড়িয়ে আছে বই, কাগজ আর পেন্সিল। তার সামেনই বসে আছে একটি শিশু- গোলাম রাসুল আয়ান। বাহ! কী সুন্দর তার নাম। ক্লাস ফোরে পড়ে মাত্র। 

মাগরিবের আযান হচ্ছে। সন্ধা ছেয়ে যাচ্ছে পুরো আকাশ। শহরের উঁচু উঁচু দালান কোঠার ভিরে আকাশটাকে কেমন ছোট ছোট লাগে। শহরের আকাশ বলে কথা। আর ঘর বাড়িগুলো আকাশটাকেই কেমন ছোট বানিয়ে দিয়েছে। উঁচু দালান কোঠা আর ঘর বাড়ির ঠেলায় বিশাল আকাশটাও ছোট ছোট লাগে। লম্বা লম্বা পায়ে এগিয়ে যাচ্ছি মসজিদের দিকে। মসজিদের গলির পাশেই ছোট্ট একটি এটিএম বুথ। সামনেই ফ্লোরে বসে আছেন সদরুদ্দিন, একজন সিকিউরিটি গার্ড। পরনে নীল রংয়ের একটি পোশাক। আর মাথায় কালো একটি ক্যাপ। বাম দিকে একটু হেলে আছে ক্যাপটা। আইডি কার্ডটাও গলাও ঝুলছে। বেশ সৌখিনেই মনে হচ্ছে লোকটাকে। জুতাগুলও মাশাআল্লাহ। তার সামনেই ফ্লোরে ছড়িয়ে আছে বই, কাগজ আর পেন্সিল। তার সামেনই বসে আছে একটি শিশু- গোলাম রাসুল আয়ান। বাহ! কী সুন্দর তার নাম। ক্লাস ফোরে পড়ে মাত্র। 

চ্যাটজিপিটি:
প্রশ্ন:
“মাগরিবের সময়। আযান হচ্ছে। লম্বা লম্বা পায়ে এগিয়ে যাচ্ছি মসজিদের দিকে। পাশেই দেখলাম এটিএম এর একজন সিকউরিটি গার্ড তার ছেলেকে ডউটিরত অবস্থায়ই পড়াচ্ছে। তার ছেলেটি ক্লাস ফোরে পড়ে। তার নাম গোলাম রাসুল আয়ান। আর তিনি তার ছেলেকে ম্যাথ পড়াচ্ছেন রাস্তায় বসেই।  বাবার নাম সদরুদ্দিন। তাদের বাসা ঝুটপট্টি। এটার অবলম্ভনে একটা সাহিত্যপূর্ণ লেখা দাও।”

উত্তর:

রাস্তায় বাবার পাঠশালা

মাগরিবের আযান শুরু হয়েছে। আকাশের রঙ লালচে আভায় ঢেকে গেছে। লম্বা পায়ে এগিয়ে যাচ্ছি মসজিদের দিকে। মসজিদের গলির পাশেই একটা ছোট এটিএম বুথ। সেখানে এক কোণে বসে আছেন সদরুদ্দিন, একজন সিকিউরিটি গার্ড। পরনের জীর্ণ নীল পোশাক আর মাথায় এক টুকরো ধূসর টুপি। তার সামনেই রাস্তায় ছড়িয়ে আছে কাগজ আর পেন্সিল। তার পাশে বসে এক শিশু—গোলাম রাসুল আয়ান, যে মাত্র ক্লাস ফোরে পড়ে।

চমৎকার এক দৃশ্য চোখে পড়ল। সদরুদ্দিন নিজের দায়িত্বের ফাঁকে ছেলেকে পড়াচ্ছেন। এক হাতে পেন্সিল ধরে আয়ান মনোযোগ দিয়ে বাবার কথা শুনছে। আর সদরুদ্দিনের চোখে মিশে আছে এক গভীর তৃপ্তি।

ছোট্ট আয়ান হয়তো জানে না তার বাবার সংগ্রামের গল্প। জানে না ঝুটপট্টির ছোট ঘরে ফিরতে কতটা ক্লান্ত হয় তার বাবা। কিন্তু জানে, বাবার এই মমতা তাকে একদিন নিয়ে যাবে বড় স্বপ্নের দিগন্তে।

পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি, কিন্তু চোখ সরাতে পারছি না। রাস্তায় বসে গণিতের সূত্রের সাথে যুদ্ধ করা এই দৃশ্য যেন কোনো জীবন্ত গল্প। এই যুদ্ধ শুধু সংখ্যার নয়, জীবন বদলে দেওয়ার। বাবার পরিশ্রম আর মমতা যেন আয়ানের ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে দিচ্ছে।

হয়তো আজ মাগরিবের আলো শেষ হওয়ার সাথে সাথেই সদরুদ্দিন আর আয়ান একসাথে ফিরবে ঝুটপট্টির ঘরে। কিন্তু এই রাস্তায় বসে শিখে নেওয়া শিক্ষা আর বাবার ভালোবাসার এই ছোট্ট পাঠশালা রয়ে যাবে অনন্তকাল।

প্রশ্ন:
“রাস্তায় বাবার পাঠশালা” এটার মতো করে আরো কিছু সাহিত্যপূর্ণ শিরুনাম দাও আমাকে। 

উত্তর:

১. স্বপ্ন বুননের পাঠশালা
২. পথের ধুলোয় শিক্ষা ✔
৩. লণ্ঠনের আলোয় স্বপ্ন
৪. বাবার কাঁধে ভবিষ্যতের বোঝা
৫. জীবনের পাঠ রাস্তায়
৬. সংগ্রামের মেঠোপথে শিক্ষা
৭. সাদা কাগজে রঙিন স্বপ্ন
৮. বাবার হাতে জ্ঞানের প্রদীপ
৯. রাস্তায় বসা ছোট্ট বিশ্ববিদ্যালয়
১০. ধুলোর মাঝে স্বপ্নের বীজ
১১. বাবা আর ছেলের অঙ্কের গল্প
১২. স্বপ্ন ছোঁয়ার সিঁড়ি
১৩. পথের ধারে জ্ঞানের আলো
১৪. ঝুটপট্টির গল্পকথা
১৫. মসজিদের গলি থেকে ভবিষ্যতের দিগন্তে

প্রশ্ন:

গল্পটাকে সাহিত্যের আলোকে বিশ্লেষন করো তো ধরন শুরু শেষ সিব কিছুই

উত্তর:

গল্পটির একটি সাহিত্যিক বিশ্লেষণ করা যাক। এটি সংক্ষিপ্ত হলেও গভীর, হৃদয়স্পর্শী এবং বাস্তবতাকে ছুঁয়ে যাওয়া এক টুকরো জীবনকথা।


গল্পের ধরন

গল্পটি একেবারে জীবনঘনিষ্ঠ। এটি বাস্তবতাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এবং মানবিক মূল্যবোধ ও সংগ্রামের ছবি তুলে ধরেছে। এই ধরনের গল্পকে প্রতিবিম্বধর্মী বা সামাজিক বাস্তবতার গল্প বলা যায়। এখানে কোনো অতিরঞ্জন নেই; বরং ক্ষুদ্র অথচ গভীর এক টুকরো জীবন এখানে মূর্ত হয়েছে।


গল্পের শুরু

গল্পের সূচনা হয়েছে এক সাধারণ মুহূর্তে—মাগরিবের আযানের বর্ণনা। লেখক মসজিদের দিকে যাত্রা করার মাধ্যমে এক পরিচিত পরিবেশকে দৃশ্যমান করেছেন। আযানের সময়, সন্ধ্যার আলো, এবং শহরের চেনা চিত্রটি পাঠকের মনে একটি সাধারণ বাস্তবতা প্রতিষ্ঠা করে। এটি কেবল দৃশ্যপট নয়, বরং গল্পের আবেগঘন পরিবেশ তৈরি করার সূক্ষ্ম মাধ্যম।


গল্পের মূল বিষয়

গল্পের মূল উপজীব্য হলো বাবা ও সন্তানের সম্পর্ক, এবং সেই সম্পর্কের ভিত গড়ে তোলার সংগ্রাম। সদরুদ্দিনের মতো একজন সাধারণ মানুষ, যিনি পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন, কিন্তু তার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে সন্তানকে শিক্ষার আলো দিতে ব্যস্ত। রাস্তায় বসে ছেলেকে পড়ানো দৃশ্যটি একদিকে দারিদ্র্যের প্রতীক, অন্যদিকে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

গল্পে গণিতের চর্চা একদিকে সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার প্রতীক, অন্যদিকে বাবার অপরিসীম ত্যাগ ও ভালোবাসার প্রতিফলন। এভাবে শিক্ষার গুরুত্ব, সংগ্রামের সৌন্দর্য, এবং ভালোবাসার গভীরতা একসাথে মিলে একটি নান্দনিক চিত্র তৈরি করেছে।


গল্পের সমাপ্তি

গল্পটি একটি উন্মুক্ত সমাপ্তি (open-ended)। আমরা জানি না, সদরুদ্দিন ও তার ছেলে ভবিষ্যতে কোথায় যাবে, তবে এটি পরিষ্কার—এই গল্পটি একটি ভালোবাসায় ভরা সম্ভাবনার গল্প। লেখকের পর্যবেক্ষণ এখানে থেমে গেছে, কিন্তু পাঠকের কল্পনায় গল্পটি এগিয়ে যায়। সদরুদ্দিনের ভালোবাসা আর শিক্ষার প্রতি তার নিষ্ঠা আয়ানকে একদিন কোথায় নিয়ে যাবে, তা পাঠক নিজেই ভাবতে পারেন।


গল্পের ভাবগত গুরুত্ব

গল্পটি সমাজের অবহেলিত শ্রেণির সংগ্রাম এবং শিক্ষার প্রতি তাদের অদম্য আগ্রহের প্রতিফলন। এটি দেখায়, সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মানুষ নিজের সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করলে ভবিষ্যৎ বদলে যেতে পারে। এটি দারিদ্র্যের মধ্যেও আশার আলো খুঁজে পাওয়ার গল্প।


সাহিত্যিক দিক

গল্পটি ভাষার দিক থেকে সরল, কিন্তু ভাবগত দিক থেকে গভীর। এটি শব্দ দিয়ে দৃশ্যপট আঁকতে সক্ষম এবং পাঠকের মনে আবেগের সঞ্চার ঘটায়। লেখকের বর্ণনা অত্যন্ত বাস্তব, যা পাঠককে দৃশ্যমান বাস্তবতার মধ্যে নিয়ে যায়। এটি একটি সংক্ষিপ্ত, কিন্তু স্মরণীয় গল্প।


সমালোচনা ও প্রশংসা

গল্পটি সংক্ষিপ্ত হলেও এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী। তবে এখানে চরিত্রের অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে আরো বিশদ কিছু যোগ করা হলে পাঠক আরো বেশি আবেগঘন সংযোগ স্থাপন করতে পারত।

সমগ্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, গল্পটি ছোট হলেও জীবনের গভীর দর্শনকে ধারণ করে। এটি এক অনুপ্রেরণার গল্প, যা পাঠককে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।


প্রশ্ন:

উত্তর:


Popular posts from this blog

জীবনের ফার্স্ট টিউশনি (১০/১২/২০২৩)

রাফানের আম্মু