রাফানের আম্মু
প্রিয় স্টুডেন্ট! প্রতিটা মুহূর্ত আপনার ফুরোচ্ছে না। বার বার ওয়াটসআ্যপ চেক করা। বুকের ছোট্ট একটা কোণে শুন্যতা আর হাহাকার অনুভব করা। ভেতর থেকে অসহ্য এক যন্ত্রনা অনুভব করা। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আবার বড় আকারে নিঃশ্বাস এসে সামনে পড়া। নাকের নিঃশ্বাসের বড় বড় শব্দ নিজের কানে এসে আছড়ে পড়া। মনের অজান্তেই কখনো চোখের কোনো পানি এসে জমা হওয়া। মানুষের সমুদ্রে বাস করেও কেমন যেন শুন্য এক গ্রহে আমার বাস করা। মাঝে মাঝে হৃৎপিণ্ড কেঁপে কেঁপে উঠা। পুরো পৃথিবীটাই কেমন যেন বিরানভূমির মত লাগা। চিৎকার দিয়ে কান্না করতে ইচ্ছা করা।
এমনটা হচ্ছে আমি জানি। যেমনটা আমি আঁচ করতে পারছি। আপনি মানুষ, আর মানুষ হিসেবে এরকমটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না।
কিন্তু দিন শেষে আমরা জানি– একেবারে অলৌকিক ঘটনা কিছু না হলে আমাদের কিছুই হবে না, কিচ্ছূ না। সব কল্পনার সাগরে ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভেসে যাবে। হারিয়ে যাবে দূর অজানা গন্তব্যে। তারপরেও এত জল্পনা, কল্পনা, ভাবনা কেন? এর সঠিক কারণ আমার জানা নেই। শুধু ভালো লাগা না অন্যকিছু–এর সঠিক উত্তরটাও জানা নেই আমার। আপনার উত্তরটাও এর ব্যতিক্রম হবে আমার মনে হয়না।
হে প্রিয়ংকরী! সুঃখ–দুঃখের মধ্য দিয়ে জীবনের অনেকটা দূর পথ পারি আপনি দিয়ে ফেলেছেন। আর খুব বেশি দূর আছে তাও বলা যায় না। আপনার ক্ষেত্রে এটা যেমন সত্য আমার ক্ষেত্রে, সবার ক্ষেত্রেও সেইম সত্য। জীবনের এই পর্যায়ে এসে সুন্দর একটা জীবন বানিয়ে নিতে হবে। চেষ্টা করে যেতে হবে। আর আল্লাহর কাছে দু'আ করে যেতে হবে। আর যদি মনে হয় আপনি পারছেন না আল্লাহর ফায়সালার উপর সব ছেড়ে দিতে হবে। আল্লাহ চাহে তো কল্যাণের ফায়সালা হবে কোন একদিন। যা হয়তো আপনি বা আমি কল্পনাও করতে পারি না বা পারবো না কখনো।
আমাদের এই ভালো লাগা না লাগা–এর গ্রহনযোগ্যতা নেই কোন দৃষ্টিকোণ থেকেই– না সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে, না ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। তারপরেও কেন এত দূর...?! দেখা না দেখা, জানা অজানা, ধোঁয়াশাচ্ছন্ন কয়েক মূহুর্তের এই জার্নি আমাদের। তাতেই কতটা কাবু হয়ে পড়েছি আমরা!। তাই না। কী অদ্ভুত এক জীবন
এটা হয়েছে কেন জানেন? জীবনের এ পর্যায়ে এসে আমাকে আপনার 'স্বপ্নের মানুষ' ভাবছেন। আমিও...। কারণ আপনার চিন্তাধারা আর ধর্মীয় মনোভাব আমার চিন্তাধারা আর ধর্মীয় মনোভাবের সাথে সম্পূর্ণ মিলে যায়। আর একটা নিয়ম আছে– বন্ধুত্ব আর সম্পর্ক শুধু তাদের সাথেই হয় যাদের সাথে নিজের চিন্তাধারা মিলে যায়। এটা জীবনের সকল ক্ষেত্রে।
প্রিয় অল্ডেস্ট স্টুডেন্ট! এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য বড় একটা পরীক্ষা। আল্লাহর এ পরীক্ষায় আমাদেরকে উত্তীর্ণ হতেই হবে। বাকি যত ভালো লাগা না লাগার বিষয় আছে সব ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। এরপরেও কোন চাওয়া পাওয়া থাকলে আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে নিতে হবে। এবং সবকিছু আল্লাহর উপর ছেড়ে দিতে হবে।
আমি জানি এভাবে চলতে থাকলে আপনার দীর্ঘদিনের সাজানো এই সুন্দর সংসারটা দুমরে মুচড়ে যাবে, ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে (হয়তোবা)। ভাঙ্গবে না হয়তো। কিন্তু অদৃশ্য এক যন্ত্রনায় কাতরাতে হবে সবসময়। বুকের ছোট্ট একটা কোণে চিন চিন ব্যথা হবে সারাক্ষণ। শুরু হবে গলাকাটা পাখির মতো ছটফটানি। আর কত কি। দিন শেষে এর সকল দায়ভার বয়ে বেড়াতে হবে আমাকে। এটা খুঁড়ে খুঁড়ে খাবে আমাকে আপনাকে।
প্রিয় বোন আমার! আমাদের ফিরে যেতে হবে আগের সেই পুরনো দায় দায়িত্বের দিকে। যেমন আপনি একজন দায়িত্বশীল মা– রাফান ও রাইফের আম্মু, হুম আম্মু, আম্মু। আপেল মাহমুদ খান ভাইয়ার প্রেয়সী, কামিনী, অর্ধাঙ্গিনী। আর আমি শুধু একজন রাফানের হোম টিউটর। নাথিং এলস। একজন দায়িত্বশীল শিক্ষক হওয়ার চেষ্টা করছি। এই যা আর কিছুই না।
চলেন এখন যাওয়া যাক আপনার বিষয়ে:
ভাইয়ার প্রতি আগের মতো টান আর নেই। এটা আপনি আগেই বলেছেন। না থাকার বেশ কিছু রিজনও আপনি বলেছেন। আচ্ছা যে কারণগুলোর জন্য ভাইয়ার প্রতি আপনার বিতৃষ্ণা বা অরুচি এসেছে। আগের সেই টানটা নেই। এ ছাড়া ভাইয়ার অন্য কোন ভালো গুণ কি নেই যা আপনার ভালোলাগে? নাকি সবই এমন যা আপনার খারাপ লাগে। এটা কখনোই হতে পারে না যে একটা মানুষের ভালো গুণ থাকবে না।
সেই ভালো গুণগুলো কি কাউন্ট করেছেন কখনো? সেগুলো ভেবে আশার আলো দেখেছেন কখনো। নাকি ভালো না লাগা গুণগুলোই খুঁড়ে খুঁড়ে খেয়েছে আপনাকে। ভালো মন্দ কম্বাইন করেই আসলে মানুষ। আমার সবগুণ যে ভালো তা না। খারাপ গুণ যে একেবারে নাই তাও না। ভালো মন্দ মিলেই আমি নামক সত্তাটা। সেইম আপনি, আমি, সবাই।
আপনি বলেছেন "টাইমস আপ"।
কথাটা আপনি বুঝে বলেছেন না শুধু আবেগের ধাক্কায় সামনে নিক্ষেপ করলেন?
যেভাবেই বলেন না কেন দিনশেষে আপনি তাঁর সাথেই থাকছেন। এখানে আপনার একটা বিশাল সাকসেসের অপারচুনিটি আছে। সেই পারস্পেকটিভ থেকে একটু কথা বলি চলেন:
আলহামদুলিল্লাহ! সুন্দর ও গুছানো বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা আপনি বলেছেন –'রাইফ বড় হলে বা অবসর সময় পেলে এই এই করবেন'। খুব সুন্দর পরিকল্পনা।
হে প্রিয় হিতৈষিণী! এর সাথে যুক্ত করতে হবে কষ্টসহিষ্ণু ও উপকারী এই পরিকল্পনাটাও। আপনার পরিকল্পনার বেশিরভাগ অংশই যেহেতু রিলিজিয়াস বিষয়ের সাথে কানেক্টেড তাই এটাও একটা রিলিজিয়াস বিষয়ের পরিশ্রম হিসেবে মেনে নিতে হবে। রিলিজিয়াসলি আপনি মানুষদের হেল্প করতে চান। নিজেকে ঝালাই করতে চান ইসলামের ছাঁচে। সাজাতে চান ইসলামের সাজে। রাঙ্গাতে চান ইসলামের রঙ্গে। তাই যদি হয় আপনার চাওয়া আর পরিকল্পনার অংশ তাহলে এটা আপনার মহাগুরু দায়িত্বের একটি। কী সেই মহাগুরু দায়িত্ব?
বুঝতে আপনার বাকি নেই কী আমি বলতে চাচ্ছি। ভাইয়ার পেছনে মেহনত চালিয়ে যাওয়া। (প্লিজ ওয়েইট করেন...)
হযরত নূহ (আ:) সারে নয়শত বছর দাওয়াত দিয়েছেন এর মাঝে কখনো বলেছেন যে টাইমস আপ? না, তো আপনি এটাকে যদি একটা দাওয়াতি মেহনত হিসেবে নেন আমি মনে করি তখন অনেক সমস্যাই সমাধান হয়ে যাবে। তবে এটা আপনার জন্য অনেক বড় চেলেঞ্জ। সাকসেস হলে তো লাইট আপন লাইট। আলোয় আলো, সোনায় সোহাগা। সাকসেস না হলেও আপনি সোনায় সোহাগা। আল্লাহ আপনাকে আপনার প্রতিদান দিবেন। দ্বীনের পথে আনার মানসে ভাইয়াকে বলা প্রতিটা কথার বিনিময়ে আপনি সাওয়াব পাবেন।
এখানে একটা কথা বলে রাখি–স্ত্রী হিসেবে বলে আসছেন প্রায় এক যুগ ধরে। তাই রেগে রেগে যাচ্ছেন মাঝে মাঝেই। তার ওয়াইফ আমি বলছি কেন কথা শুনছে না। তাকে কথা শুনানোর দায়িত্ব আপনার না। আপনার দায়িত্ব তাকে আদবের সাথে প্রজ্ঞার সাথে বলা। রাসুল তাঁর আপন চাচাকে কথা শোনাতে পেরেছেন? না পারেন নাই। আল্লাহ বলছেন– "আপনি যাকে ভালোবাসেন তাকে চাইলেই হেদায়াত দিতে পারবেন না।" বিষয়টা যদি তাই হয় তাহলে আপনি আমি কে?! কী করতে পারি আমরা বেশি থেকে বেশি? দু'আ আর কন্টিনিয়াসলি সফটলি পুশ করে যাওয়া। এটাও হতে হবে প্রজ্ঞার সাথে।
ভাইয়া পরিবর্তন করার জন্য বেশ কিছু টেকনিক ব্যবহার করতে হবে। যাস্ট বল্লেন "তুমি ভালো হয়ে যাও।" এভাবে সে কথাগুলো ওউন করবে না। এমনভাবে বলতে হবে যেন তিনি ওউন করেন। ফিল করেন।
ভাইয়ার দ্বীন ইসলাম আর ঈমান আমল নিয়ে খুব বেশি ভাববেন না। (এটা তখন যখন সর্বদিক থেকে আপনার চেষ্টা করা শেষ। আপনি এখন ক্লান্ত, পেরেশান।) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াত দিচ্ছেন। কিন্তু তাঁর সম্প্রদায় ঈমান আনছে না কথা শুনছে না। তিনি খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। হয়ে পড়লেন খুব পেরেশান। শান্ত আর পেরেশানিতে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার উপক্রম। তখন আল্লাহ সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন। 'ওই সব লোক ইমান আনছে না, এ কারণে কি তাদের চিন্তায় ও পেরেশানিতে আপনি নিজেকে শেষ করে দেবেন?’ (সুরা-৪২ শুরা, আয়াত: ৩)
(এখন কি আপনি এ ব্যপারে চিন্তা করে করে নিজেকে শেষ করে দিবেন? নাকি জান্নাতের সুখময় জীবনের প্রস্তুতি নিবেন। না খাওয়া, কঠিন কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া। বা অন্য কিছু...)
তবে আপনার চেষ্টা বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। এর জন্য আপনি অবশ্যই প্রতিদান পাবেন। কোন সন্দেহ নেই তাতে।
এখন আপনার মেজর ইস্যু হচ্ছে "রিলিজিয়াস না"
হ্যাঁ, দ্বীনদার জীবনসঙ্গী পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। শুধু গুরুত্বপূর্ণ না। হাদিসের নির্দেশনাও তাই। আর কোরআন হাদিসের বাহিরে কোন কল্যাণ তো চিন্তাও করা যায় না। তবে এ ক্ষেত্রে আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে ভাইয়াকে ইসলামের প্রতি উৎসাহিত করা এবং আল্লাহ কাছে দু'আ করা। প্রয়োজনে এক্ষেত্রে কোন শায়খের সাহায্য নিতে পারেন। (আপনারা চাইলে.....)
আপনি চেষ্টা করছেন এটা আমি জানি বাট আপনার চেষ্টায় কি বিন্দু মাত্র পরিবর্তন আসে নাই? যদি তাই হয় তখন এটা.... আর তখনো হতাশ হওয়া যাবে না। আর যদি কিছুটা চেঞ্জ হয় তাহলে তো আপনি সাকসেস হচ্ছেন। ধৈর্য হয়তো আরেকটু ধরতে হবে। পরীক্ষা একটু বেশিই দিলেন। আর যার পরীক্ষা যত কঠিন তার প্রতিদানটাও তো বড়– তাই নয় কি?
আমরা দু'জনেই যথেষ্ট মেচিউর্ড। তারপরেও ভুল মানুষেরই হয়। ভুল না হলে সে তো আর মানুষ না তাই না। আমাদের ভুল হচ্ছে বুঝতে আমরা এটা পারছি– দু'জনেই পারছি। কিন্তু, কি যেন আমাদেরকে টেনে ধরে আছে। পেছন থেকে টেনে ধরা সেই দড়িটা আমাদের কাটতেই হবে যেভাবেই হোক। এটাও জানি বাহ্যিক দৃষ্টিতে কোনভাবে আমাদের এক হওয়া পসিবল না। তারপরেও কেন? কেন? কেন....?
আলহামদুলিল্লাহ! আপনি চান রিলিজিয়াস একজন মানুষ হতে। এপারে ওপারের কল্যাণ পেতে। একজন নারী বলে আপনার কাজের পরিধি ছোট্ট একটা গণ্ডিতে আটকে থাকবে তা কিন্তু না। আপনার পরিধি পুরো পৃথিবী, পুরো দুনিয়া। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক গাইডলাইন, সুস্থ মানসিকতা ধৈর্য এবং প্রচুর হার্ডওয়্যার্কের মানসিকতা। নিজেকে তৈরি করতে হবে যোগ্য থেকে যোগ্যতর করে। এতে যে তৃপ্তি আর প্রশান্তি পাবেন দুনিয়ার কোথাও পাবেন কিনা আমার জানা নেই। আপনার বেশ কিছু যোগ্যতা আছে এটাকে রাইট ওয়েতে ব্যবহার করাটা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রবলেম হচ্ছে–থাকে অনেক কিছুই আমাদের কিন্তু ব্যবহার জানিনা বলে পুরোটা জীবন কেটে যায় অহেতুক গল্পগুজবে। (এর সম্পূর্ণ একটা
প্ল্যান সময় করে দিয়ে দিবো আপনাকে)
আমার মতে এখন আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে:
আপনার চেষ্টা অব্যাহত রাখা। (এজ এ দায়ী হিসেবে)
নিজের আ'মালের প্রতি মনোযোগী হওয়া।
সন্তান সন্ততিদের প্রতি মনোযোগী হওয়া।
যখনই খারাপ লাগবে আল্লাহর দিকে ফিরে যাবেন।
কোরআন তিলাওয়াত করবেন। (আমি চেষ্টা করি।)
যে কোন সমস্যা সামনে আসলে দু'রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে চাইবেন তারপর কাজগুলো করবেন তখন ভুল হলেও আল্লাহ কোন না কোন কল্যাণের ফায়সালা করবেন।
নিরবে নিভৃতে একজনের কাছে (আল্লাহ) চাওয়ার অভ্যাস করবেন প্লিজ 🙏, (এটা আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।)
বেশি বেশি আসতাগফিরুল্লাহ পড়বেন। আমি ট্রাই করি।
৫:৪৫ pm
23.12.24
----------------
হিকমত ও প্রজ্ঞার সাথে ধারাবাহিকভাবে দাওয়াত দিয়ে যেতে হবে। আপনার করা সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে নিজেকে নিঃশেষ করে দিয়েন না। কুরআনের এই আয়াতটি স্মরণ করবেন। আর দু'আ করতে থাকবেন।
'ওই সব লোক ইমান আনছে না, এ কারণে কি তাদের চিন্তায় ও পেরেশানিতে আপনি নিজেকে শেষ করে দেবেন?’ (সুরা-৪২ শুরা, আয়াত: ৩)