আব্বা আম্মা
ইমির বিয়ে। দিন তারিখ প্রায় পাখা পুক্ত হয়ে যাবে দুই একদিনের মধ্যে। বর পক্ষ একটা সম্ভাব্য ডেইট দিয়েছে আগস্টের ৯ তারিখ। তবে এটা ফাইনাল না। আমাদেরও কিছু সমস্যা থাকার ফলে তারিখটা আরেকটু সামনে যেতে পারে।
ক্নিন্তু সমস্যা হলো এই অনুষ্ঠান টা আঞ্জাম দেওয়ার মতো এক টাকাও আব্বার পকেটে নেই। নেই বলতে নেই। এক টাকাও নেই। কি করা যায় এটা তো একটা বড় মাপের বিষয়। মোটা অংকের টাকার ব্যপার সেপার। কিভাবে মেনেজ করা যায় এ নিয়ে সবার চিন্তা। আব্বা আম্মা তো চিন্তা করতে করতে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আর তা ছাড়া ঘরে সব কিছু প্রয়োজন। খাট, আরো কত কি। কিন্তু টাকা তো নেই এক টাও।
পরিশেষ সিদ্ধান্ত হলো উপরের জমিটা বন্ধক দেওয়া হবে। আনুমানিক 50 হাজার টাকার মতো হতে পারে। এই ৫০ হাজার টাকা নিয়ে নামলে হয়তো কিছুদূর যাওয়া যাবে। তবে পরে আরো টাকা লাগতে পারে। রায়হান কাকার সাথে পরামর্শ হলো যে, কি করা যায়? পরে রায়হান কাকাকে প্রস্তাব করা হয় যে উপরের ক্ষেতটা তুই নেগা (আব্বা প্রস্তাব করেছে) তখন বলেছিলো ঠিক আছে টাকা মেনেজ করতে হবে তো। একথা বলে চলে যায়।
আমরা সবাই মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম যে এটা রায়হান কাকা নিচ্ছে। কিছুটা টেনশন কমেছিলো আব্বার ও আম্মার। কিন্তু দুইদিন পর নাকি আব্বাকে বলে নিচের ক্ষেত থেকে এক খাটা দাও। এটা দিলে আমাদের জন্য অনেক কষ্ট হয়ে যাবে। এবং আম্মা এটাতে রাজি না।
এখন আব্বার টেনশন আর দুশ্চিন্তা আরো বেড়ে গেছে। কেমনে কি করবে। কার কাছে দিবে বন্ধক। বললেই আর বন্ধক হয়ে যায় না। আব্বার দৌড়ঝাপ শুরু হয়েগেছে। একেক জনের কাছে যাচ্ছে। জানি না এখন পর্যন্ত কি হয়েছে।
ঘরে একটা খাটও নাই। চৌকি আছে কয়েকটা। এটা সেই কবে থেকে চলে আসছে। এর পর আর একটা খাট কেনার মতো সুযোগ হয়ে উঠেনি। এখন একেবারে খুব জরুরী হয়ে পরেছে। তাই আব্বার শখের মেশিনটা বিক্রি করে দেন ছয় হাজার টাকায়। যেট আব্বা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছেন। সেটা দিয়েও তো খাট হবে না। লাগবে আরো ছয় হাজার অন্তত 12 হাজার টাকার মধ্যে একটা খাট আনতে। বাকি সেই টাকাটা আসবে কোথা থেকে।
বলেতে গেলে ঘরে ভালো একটা গ্লাস নাই, প্লেট নাই যা মেহমানদের কাছে উপস্থাপন করা যায়। মাঝে মাঝে আম্মা ফুফুর বাড়ি থেকে ধার নিয়ে আসেন মেহমানদের প্রয়োজনে।
ইদানিং তো আব্বার বাজার করতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ইনকামের কোন বালাই নাই। খরচ তো আছেই। আর আমি তো কোন সাপোর্ট করতে পারছি না। এটা আব্বা আম্মাকে আরো বড় কষ্ট দিচ্ছে বলে আমার কাছে মনে হয়। টাকার বেশ কয়দিন ধরে মাছ কিনতে পারছেন না।
গতকাল আপা কল দিয়েছিলো বাড়িতে। আম্মার সাথে কথা হলো। আমি শুনিনি কি কথ হয়েছে তাদের মাঝে। পরে জিজ্ঞেস করলাম আম্মা কি বললো? আম্মা নাকি বললো আব্বা খুব বেশি টেনশন করছে। টেনশনের মাত্রা তো দেখা যায় না। বোঝা যায় না। আম্মার একটা শব্দ আমাকে পুরো স্তব্ধ করে দিয়েছে... 😢 আব্বা কতটা টেনশনে আছে তার একটা আন্দাজ পেলাম। এভাবে টেনশন করতে করতে তোর দুলাল কাাকার মতোই নাকি মারা যায় কে জানে। কিছুদিন আগে আমার এক কাকা স্ট্রোক করে মারা যায়। তার কথাই আম্মা বলছিলো । তার জীবনটা খুব টেনশন আর দুঃখ দুর্দশার মধ্য দিয়েই গিয়েছে।
আম্মার আরেকটা শব্দ আমাকে.......😢 ” আমাকে তো সাপোর্ট করার মতো কেউ নেই”
আব্বা আম্মা আমাদেরকে কোনদিন কষ্ট কি জিনিস বুঝতে দেননি। তার খেয়ে না খেয়ে আমাদেরকে সুন্দর করে রেখেছেন। ভালো ভালো খইয়েছেন। যখন বড় মাছ এনেছে রাতে ঘুম থেকে উঠিয়ে আমাকে বলতো আব্বা তোমার জন্য মাছের এই মথাটা এনেছি। কখনো দুধ কলা ভালো কোন জিনিস আনলেই আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে খাইয়ে দিতেন....😢 া আম্মাকে কোনদিন দেখিনি কোন ভালো জিনিসটা তারা খেয়েছে। আমরা খাওয়ার পরে যাদি কিছু থেকেছে তারপরেও সেটা আমাদের জন্য রেখে দিয়েছে।
আমাদের সামন্য অসুস্থতা হলে ডাক্তার এখানে সেখানে দৌঁড় ঝাপ শুরু হয়ে যায়। আর তাদের দুজনের শরীরে রোগের বাসা বেঁধে আছে তার পরেও কোন ডাক্তার দেখানোর নাম গন্ধ নাই।